সর্বশেষ সমাচার

Dalit Women Lives Matter

.$posted_by. মোঃ শহর আলী 03.Oct.2020; 08:09:53

ভারতে কথিত উচ্চ বর্ণের হাতে নিম্নবর্ণের নির্যাতনের ঘটনা নতুন কিছু নয়। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই নির্যাতনের ঘটনা হিন্দুত্ববাদী সরকারের আমলে বহুগুণে বেড়েছে। প্রগতিশীল মানুষেরা এবার বাধ্য হয়েছেন রাস্তায় নামতে।

পরপর কয়েকটি দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় ভারতে দানা বাঁধছে বিক্ষোভ। সুষ্ঠু বিচার চেয়ে আন্দোলনকারীরা বলছেন, নারীর প্রতি সহিংসতা ঠেকাতে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না বিজেপি সরকার। প্রশ্ন উঠেছে ধর্ষণের ঘটনা তদন্তে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও।

গত মাসের মাঝামঝিতে উত্তর প্রদেশের হাথরসে ১৯ বছরের এক দলিত নারীকে দলবেধে ধর্ষণ করা হয়। অভিযোগ ওঠে প্রতিবেশি উচ্চ বর্ণের চার ব্যক্তি এতে জড়িত। অথচ ময়নাতদন্তের বরাতে পুলিশ জানায়, ওই নারী ধর্ষণের শিকার হননি। শারীরিক নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে তার।
সম্প্রতি একই প্রদেশের বলরামপুর ও বুলন্দশহরে আরো দুই নিম্নবর্ণের নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার পরই ফুঁসে ওঠে গোটা ভারত। বিক্ষোভ দেখা দেয় দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে। অভিযোগ আছে, প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করতে তাড়াহুড়ো করে ধর্ষিতার দেহ সৎকার করা হয়েছে।
এই ঘটনার প্রতিবাদে এক বিক্ষোভকারী জানান, ‘ঘটনা ধামাচাপা দিতে রাতারাতি সৎকার করে ফেলা হলো। পুলিশ বললো সে নাকি ধর্ষিতই হয়নি। অপরাধীদের বাঁচাতেই এরকম করা হলো। আর এতে সরাসরি সহায়তা করেছে প্রশাসন।
বিক্ষোভকারীরা আরো বলছেন সুষ্ঠু বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা। এক নারী বিক্ষোভকারী জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী বলছেন, মা বোনদের রক্ষা করতে হবে। এই হলো মা বোনদের নিরাপত্তার নমুনা। এই সরকার নারীর নিরাপত্তার পুরোপুরি ব্যর্থ। বিচার না পাওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বো না।’
সম্প্রতি দেশটির দ্য ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো এক সমীক্ষা প্রকাশ করে, যাতে বলা হয়, ভারতে প্রতি ১৬ মিনিটে অন্তত একজন মেয়ে ধর্ষিতা হয়। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে সরকারি সূত্রের বরাতে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালেই উত্তর প্রদেশে প্রায় ৬০ হাজার যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে সাড়ে তিন হাজারই ধর্ষণের শিকার। যদিও এসব সংখ্যাকে প্রকৃত অর্থে কয়েক গুণ বলছে বেসরকারি হিসেব।
হাথরসকাণ্ডে অবশেষে বিরোধীদের রাস্তা ছেড়ে দিতেই হল উত্তরপ্রদেশ সরকারকে। শনিবার বিকেলে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধীকে হাথরসে ঢোকার অনুমতি দিয়েছে তারা। রাহুল একা নন, তাঁর দিজি প্রিয়ঙ্কা গাঁধী এবং কংগ্রেসের আরও তিন জন নেতাকে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সেই মতো দিল্লি উত্তরপ্রদেশ সীমানা থেকে হাথরসের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। রাজনৈতিক চাপে পড়েই যোগী সরকার তাঁদের হাথরসে ঢোকার অনুমতি দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

এ দিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ শশী তারুর-সহ দলের ৩০ জন সাংসদকে নিয়ে হাথরসের উদ্দেশে রওনা দেন রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা। রূপোলি টয়োটা ইনোভার স্টিয়ারিং ছিল প্রিয়ঙ্কার হাতেই। রাহুল তাঁর পাশে বসেছিলেন। পিছনে একটি বাসে ছিলেন দলের সাংসদরা। কিন্তু দিল্লি-নয়ডা ফ্লাইওয়ে-তে ওঠার মুখে তাঁদের রাস্তা আটকায় উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। বলা হয, কংগ্রেস নেতারা ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করছেন। সেখান থেকে ফিরে যেতে হবে তাঁদের। কিন্তু এক পা-ও পিছোবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। গাড়ি দাঁড় করিয়ে সেখানেই সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তৃতা শুরু করেন রাহুল। তার প্রায় ঘণ্টাখানেক পর তাঁদের হাথরসে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
এর আগে, বৃহস্পতিবার রাহুলকে গন্তব্যের অনেক আগেই আটকে দেওয়া হয়েছিল। হাথরসের বুল গড়হী গ্রামে নির্যাতিতার বাড়ি। সেই গ্রামে ঢোকার মুখে ব্যারিকেড বসিয়েছে পুলিশ। ওইদিন সংবাদমাধ্যমকেও সেখানে আটকে দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছিল, বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)-এর তদন্ত শেষ না-হওয়া পর্যন্ত গ্রামে সংবাদমাধ্যমের প্রবেশ নিষেধ। হাথরসের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রকাশ কুমার বলেছিলেন, ‘‘বর্তমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বাইরের কোনও ব্যক্তি বা রাজনৈতিক প্রতিনিধিকে গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হবে না।’’
হাথরসের ঘটনা এবং নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে তৃণমূল সাংসদদের উপর পুলিশি নিগ্রহের অভিযোগ— এই দুটি ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে  শনিবার পথে নামলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়ামের সামনে থেকে মিছিল শুরু করেন তিনি। গাঁধীমূর্তির পাদদেশ পর্যন্ত পদযাত্রা করেন তিনি।


আরও পড়ুন : মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন: কেঁদে কেঁদে মিজান বললেন, ‘জাতির কাছে বিচার দিতে এসেছি’
আরও পড়ুন : এডিসি হারুনের পরিবার বিএনপি-জামায়াত: রাব্বানী

এ দিন বিকেল ৪টেয় শুরু হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিছিল। তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে যোগ দেন দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা, সাংসদ এবং বিধায়করা। রয়েছেন কর্মী-সমর্থকরাও।
কী বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

• হাথরসের ঘটনা নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় পোস্টারিং করুন

• আজ দেখা করতে না দিলেও, এক দিন তো দেখা করবই। সময় এক দিন না এক দিন আসবেই।

• বিজেপি সবচেয়ে বড় অতিমারি

• প্রতি ব্লকে এর প্রতিবাদে নামবে তৃণমূল কংগ্রেস

• হাথরসের ঘটনার প্রতিবাদে তৃণমূল কংগ্রেস সমস্ত তফশিলি জাতি প্রধান গ্রামে গ্রামে গিয়ে প্রচার করবে

• হাথরসের মতো একই ঘটনা সিঙ্গুরেও ঘটেছিল

• অথচ পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে সব তথ্য ওদের কাছে আছে

• পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কোনও তথ্যই নেই

• সব রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্রি করে দিচ্ছে বিজেপি

• ৪ দিন পর যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হল কেন?

• পুরো ম্যানেজ করে এখন বলছে সংবাদমাধ্যম যাবে

• যোগী আদিত্যনাথ দুর্গাপুজো বন্ধ করলেন কেন?

• পরিযায়ী শ্রমিক, ব্যবসায়ীরা কাঁদছে

• শিল্প বন্ধ হয়ে গেল

• লকডাউনে কত লোকের চাকরি চলে গেল

• এয়ার ইন্ডিয়া থেকে বিএসএনএল সব বেচে দিচ্ছে

• ভোট শেষ হলেই দলিত, নমঃশূদ্রদের উপর অত্যাচার

•  ভোটের সময় হোটেল থেকে খাবার এনে দলিত বাড়িতে গিয়ে খায়

• ওরা সকলের পদবি নিয়ে খেলা করছে

• কৃষকদের ভাতে মারার চেষ্টা হচ্ছে

• দলিত, সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার হচ্ছে

•  বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে

• দিল্লিতে অত লোক হিংসারয় মারা গেল, বিচার হল?

• আমার কাছে খবর আছে, সাংবাদিকদের ভয় দেখানো হচ্ছে

•  সাংবাদিকদেরও আটকে দেওয়া হয়েছে

•  মেয়েদের ধরে মারা হয়েছে

• গ্রামে ১ কিমি আগে প্রতিনিধিদের আটকে দেওয়া হয়

• ওই পরিবারটিকে দেখার জন্য প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছিলাম

• আমার মন হাথরসে পড়ে আছে

•  কিন্তু আমরা বাধ্য হয়ে মিটিং-মিছিল করছি

•  কিন্তু বিজেপি দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক কর্মসূচি চালাচ্ছে

•  আমরা অতিমারির জন্য কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি করছি না

•  এত নিরাপত্তা নিয়েও করোনা আটকানো যাচ্ছে না

• করোনা কমিউনিটি স্প্রেড করে গিয়েছে

সূত্র: আনন্দবাজার

এ বিষয়ে আরো খবর