সর্বশেষ সমাচার

কোভিডের নতুন প্রজাতি বাড়াচ্ছে উদ্বেগ

.$posted_by. মোঃ শহর আলী 21.Dec.2020; 01:32:44

লাগামহীন ভাবে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেন (প্রজাতি) নিয়ে আতঙ্কে কাঁপছে ইউরোপ। নয়া বিপদ থেকে বাঁচতে এ বার ব্রিটেনকে ‘একঘরে’ করল তারই একাধিক প্রতিবেশী দেশ।

করোনার নয়া স্ট্রেনের খবর পেয়েই ব্রিটেনের জন্য দরজা বন্ধ করে দিয়েছে তার প্রতিবেশী বেলজিয়াম। পরিস্থিতির মোকাবিলায় সিল করে দেওয়া হয়েছে সব সীমান্ত। ব্রিটেনের সমস্ত বিমান বাতিল করে দিয়েছে নেদারল্যান্ড-ও। একই পথে হাঁটার পরিকল্পনা করছে ইতালি। একই সিদ্ধান্ত নিতে পারে জার্মানিও। শুধু ব্রিটেন নয়, দক্ষিণ আফ্রিকাতেও মিলেছে করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেন। ফলে ব্রিটেন ছাড়াও আফ্রিকার ওই দেশটির সমস্ত বিমানও আপাতত বাতিল করে দিতে পারে জার্মানি।

সম্প্রতি ব্রিটেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, দক্ষিণ ইংল্যান্ডের কয়েকটি জায়গায় করোনাভাইরাসের একটি নতুন স্ট্রেন পাওয়া গিয়েছে। নতুন এই স্ট্রেনটি আগের থেকেও বেশি গতিতে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এই মুহূর্তে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে ব্রিটিশ প্রশাসন। দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ড এবং লন্ডনে নতুন করে লকডাউনের ঘোষণাও করা হয়েছে। আগাম সতর্কতা হিসাবে এ বার পদক্ষেপ করল তার প্রতিবেশী দেশগুলিও।

ব্রিটেনের পর এ বার ইটালিতেও দু’জনের দেহে মিলল করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেন (প্রজাতি)। রবিবার সে দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রক সূত্রে এ কথা জানানো হয়েছে।

ইটালির স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, কয়েক দিন আগেই ব্রিটেন থেকে এক আক্রান্ত ও তাঁর সঙ্গী ইটালিতে ফেরেন। বিমানে প্রথমে তাঁরা রোমের ফিউমিসিনো বিমানবন্দরে নামেন। আপাতত তাঁদের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।

করোনাভাইরাসের এই নতুন স্ট্রেন প্রথম মেলে ব্রিটেনে। এই স্ট্রেন আগের তুলনায় দ্রুত গতিতে ছড়াচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে ব্রিটিশ প্রশাসন। দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ড এবং লন্ডনে নতুন করে লকডাউন ঘোষণা করেছে বরিস জনসনের সরকার। নতুন এই স্ট্রেনকে নিয়ে গোটা ইউরোপে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

ইতিমধ্যেই ইউরোপের বহু দেশ ব্রিটেন থেকে আসা সমস্ত বিমানের ঢোকা নিষেধ করেছে। বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস ব্রিটেনের সমস্ত বিমান বাতিল করেছে। ব্রিটেন সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে বেলজিয়াম। নতুন করে যাতে সংক্রমণ ছ়ড়িয়ে না পড়ে তাই আগাম সতর্কতা হিসেবে একই পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে জার্মানি। ইটালিতে করোনার নতুন স্ট্রেন ঢুকে পড়ায় তারাও ব্রিটেনের সমস্ত বিমান বাতিল করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ব্রিটেনে নতুন স্ট্রেনের খবর মিলতেই সৌদি আরব রবিবারই সে দেশের সমস্ত আন্তর্জাতিক উড়ান পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, ইউরোপ বা অন্য যে কোনও দেশ থেকে আসা যাত্রীদের দু’সপ্তাহের জন্য নিভৃতবাসে থাকতে হবে। সেই সঙ্গে করোনার পরীক্ষাও করাতে হবে তাঁদের। সৌদির পাশাপাশি কুয়েতও ব্রিটেনের যাত্রিবাহী বিমানের উপর আপাতত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

গত সেপ্টম্বরে দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডে করোনার এই নতুন স্ট্রেন পাওয়া গিয়েছিল। সেখান থেকে দেশের অন্য প্রান্তেও ছড়িয়ে পড়ে এই স্ট্রেন এবং খুব দ্রুত গতিতে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, করোনার এই নতুন স্ট্রেন আগের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি সংক্রমণ ছড়াতে পারে। যা খুব মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। ইতিমধ্যেই এই নতুন স্ট্রেনকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ব্রিটিশ প্রশাসন।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনার এই মিউটেশন আশ্চর্যজনক নয়। তাঁদের দাবি, করোনাভাইরাস যখন খুঁজে পাওয়া গেল তখনই দেখা গিয়েছে হাজারেরও বেশি বার মিউটেশনের ক্ষমতা রয়েছে এই ভাইরাসের।

প্রতিষেধকের অপেক্ষায় দিন গুনছিল গোটা বিশ্ব। জরুরি ভিত্তিতে টিকাকরণ যদি বা শুরু হল, তাতে গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়াল নোভেল করোনাভাইরাসের নয়া প্রজাতি। এই নয়া করোনা আগের চেয়ে বহুগুণ বেশি সংক্রামক বলে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই বিশ্বের তাবড় সংস্থাগুলির তৈরি প্রতিষেধক আদৌ এর বিরুদ্ধে কার্যকর হবে কি না, তা-ই এখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সব দেশের।

ব্রিটেনে করোনার যে নয়া প্রজাতির সন্ধান মিলেছে সেটিকে ভিইউআই-২০২০১২/০১ বা বি.১.১.৭ বলা হচ্ছে। কী ভাবে এই নয়া প্রজাতির জন্ম হল, তা নিয়ে নানা তথ্য তুলে ধরেছেন বিজ্ঞানীরা। বলা হয়েছে, যে কোনও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসেরই চরিত্রবদল বা মিউটেশন ঘটে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নয়া প্রজাতিগুলি ক্ষণস্থায়ী হলেও, দ্রুতগতিতে সেগুলির ছড়িয়ে পড়া এবং এর ফলে মূল ভাইরাসের চরিত্রবদল হওয়া একেবারেই অস্বাভাবিক নয়।


আরও পড়ুন : প্রতিদিন হাঁটার পরও ওজন কমে না কেন?
আরও পড়ুন : সকালে উঠে হাঁটতে বয়স্ক ব্যক্তিরা এই বিষয়গুলি খেয়াল রাখুন

গত বছর চিনের উহানে যে কোভিড-১৯ ভাইরাসের জেরে গোটা বিশ্বে যে অতিমারি পরিস্থিতি দেখা দেয়, গত কয়েক মাসে একাধিক বার তার চরিত্রবদল হয়েছে। নভেম্বরের শুরুতে কোভিডের প্রকোপে আমেরিকায় ১৫ হাজারের বেশি বেজির মৃত্যু হয়। তার জেরে সতর্কতামূলক ভাবে প্রায় ১ কোটি ৭০ লক্ষ বেজিকে হত্যা করে ডেনমার্ক। তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে সে দেশের সরকারের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়, বেজিদের শরীরে ভাইরাসটির যদি চরিত্রবদল হয়, তা থেকে মানুষের সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। আবার কোভিড প্রতিষেধকও এর বিরুদ্ধে কার্যকর না-ও হতে পারে। তাই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সেইসময়ই ড্যানিশ প্রতিষেধক বিশেষজ্ঞ কারে মোলবাক করোনার নয়া প্রজাতি নিয়ে সতর্ক করেন। ডেনমার্কের স্টেট সিরাম ইনস্টিটিউটের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ মোলবাক বলেন, ‘‘ডেনমার্কে নয়া অতিমারি দেখা দিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। হতে পারে মিউটেশনের পর করোনার নয়া প্রজাতি মূল ভাইরাসের থেকে এতটাই আলাদা হল যে নতুন করে প্রতিষেধকের কাজ শুরু করতে হল আমাদের। এর প্রভাব গোটা বিশ্বের উপর পড়তে পারে।’’

মোলবাকের সেই আশঙ্কাই এ বার সত্যি প্রমাণিত হল। তবে করোনার এই চরিত্রবদল নতুন নয় বলে ইতিমধ্যেই দাবি উঠতে শুরু করেছে। কারণ অক্টোবরে ইউরোপে কৃষিজীবী মানুষের মধ্যে করোনার একটি নয়া প্রজাতি ধরা পড়ে। ব্রিটেনে সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করার পিছনেও সেটিই দায়ী ছিল বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। তবে সেটির সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো না গেলেও, ব্রিটেনে মাথাচাড়া দেওয়া করোনার নয়া প্রজাতি বি.১.১.৭-এর ক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।  

মূল ভাইরাসের তুলনায় করোনার নয়া প্রজাতি বি.১.১.৭-এ ২৩টি পরিবর্তন চোখে পড়েছে এখনও পর্যন্ত, যার অধিকাংশই ভাইরাসের হানায় তৈরি নতুন প্রোটিনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। মূল ভাইরাসের তুলনায় এর থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ৭০ শতাংশ বেশি। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের কেন্ট অথবা লন্ডনেই এই নয়া প্রজাতি হানা দেয়।

বি.১.১.৭ মূল ভাইরাসের চেয়ে বেশি প্রাণঘাতী কি না, তা এখনও নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি। তবে বিশ্বের তাবড় সংস্থার তৈরি প্রতিষেধকগুলি এর বিরুদ্ধে আদৌ কার্যকর হবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের আশঙ্কা, চরিত্রবদলের ফলে প্রতিষেধকের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে বি.১.১.৭। তার জেরে টিকাকরণ প্রক্রিয়াও থমকে যেতে পারে। তবে করোনার নানা প্রজাতির কথা মাথায় রেখেই যেহেতু প্রতিষেধক তৈরি হয়েছে, তাই সাফল্যের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

সূত্র: আনন্দবাজার

এ বিষয়ে আরো খবর