সর্বশেষ সমাচার

রিজার্ভ চুরি: মায়া সান্তোস দেগুইতোকে বিশাল সাজা

.$posted_by. মোঃ শহর আলী 11.Jan.2019; 12:52:50

নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি করা ১০ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে আট কোটি ১০ লাখ ডলার আরসিবিসি ব্যাংকের বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর করে হ্যাকাররা। পরে এসব অ্যাকাউন্ট থেকে এ অর্থ ব্যাংকটির জুপিটার স্ট্রিট শাখার ব্যবস্থাপক দেগুইতোর সহায়তায় অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগুইতোকে দোষী সাব্যস্ত করে গতকাল বৃহস্পতিবার বিশাল সাজা দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত।

প্রায় তিন বছর আগে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও চাঞ্চল্যকর সাইবার হ্যাকিংয়ের পর ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে অর্থ পাচারে জড়িত থাকায় দেগুইতোকে ৩২ থেকে ৫৬ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন ফিলিপাইনের বিচারিক আদালত মাকাতি সিটি রিজিওনাল কোর্ট (আরটিসি)। একই সঙ্গে তাকে ১০ কোটি ৯০ লাখ ডলার জরিমানা করা হয়।

মুদ্রা লেনদেনকারী ফিলরেম নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় তা তিনটি ক্যাসিনো ও বিভিন্ন ব্যক্তির হাতে চলে যায়। এ সময় কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই কিংবা প্রতিরোধের ব্যবস্থা ছাড়াই নির্বিঘ্নে ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে অর্থ স্থানান্তর করা হয়। ওই ঘটনায় দেগুইতো ও তার সহকারীকে বরখাস্ত করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় এটিই প্রথম রায়। এ ঘটনায় বাংলাদেশে মামলা হলেও সেটির বিচার প্রক্রিয়া এখনও চলমান। বিশ্বব্যাপী চাঞ্চল্য তৈরি করা সাইবার হ্যাকিংয়ের এ ঘটনার এতদিন পরও এফবিআই, ইন্টারপোলসহ বাংলাদেশ ও ফিলিপাইনের গোয়েন্দারা হোতাদের কোনো ক্লু খুঁজে পাননি। এর পেছনের মূল ব্যক্তিদের সম্পর্কে জানা না যাওয়ায় মামলার তদন্তেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই।

ফিলিপাইনের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিলের (এএমএলসি) দায়ের করা মুদ্রা পাচারের এ মামলার একমাত্র আসামি দেগুইতো। তার বিরুদ্ধে আনা আট দফা অভিযোগের সবগুলোতে তিনি দায়ী বলে বিচারক সিজার উনতালান প্রতিটির জন্য চার থেকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন।

বিচারক ২৬ পৃষ্ঠার রায়ে উল্লেখ করেন, অর্থ স্থানান্তরের এসব লেনদেনে তার কিছু করার ছিল না বলে মায়া আদালতে যা বলেছেন, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। অর্থ পাচারের উদ্দেশ্যে করা এসব লেনদেনে তিনি সহায়তা করেন এবং জড়িত ছিলেন বলে আদালত মনে করেন। মায়ার আইনজীবী ডেমি কাস্টোডিয়ো এ রায়ে হতাশার কথা জানিয়ে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেন। রায়ের পর এক বিবৃতিতে আরসিবিসির মুখপাত্র থিয়া ডায়েপ বলেন, এ রায় প্রমাণ করে এ ঘটনায় ব্যাংকের কোনো দায় ছিল না এবং দেগুইতো একজন 'খারাপ' কর্মী ছিলেন।

তিন বছর আগে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তৈরি করা রিজার্ভ চুরির এ অর্থ মাকাতি শহরে আরসিবিসির জুপিটার স্ট্রিট শাখার মাধ্যমে চলে যায় তিনটি ক্যাসিনোর কাছে। জুয়ার টেবিলে হাতবদল হয়ে ওই টাকা শেষ পর্যন্ত কোথায় গেছে, তার হদিস এখনও মেলেনি।


আরও পড়ুন : মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন: কেঁদে কেঁদে মিজান বললেন, ‘জাতির কাছে বিচার দিতে এসেছি’
আরও পড়ুন : এডিসি হারুনের পরিবার বিএনপি-জামায়াত: রাব্বানী

স্থানান্তরিত এসব অর্থের মধ্যে ক্যাসিনো ব্যবসায়ী কিম অং দু'দফায় দেড় কোটি ডলার ফেরত দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকে। এ ক্যাসিনো ব্যবসায়ী দেগুইতোর সাবেক কর্মস্থল ইস্ট ওয়েস্ট ব্যাংকিং করপোরেশনেও তার গ্রাহক ছিলেন। সিনেটে শুনানিকালে অং স্বীকার করেন, চীনা এক ক্যাসিনো ব্যবসায়ী তার পাওনা পরিশোধ করতে এ অর্থ দিয়েছিলেন। তবে তিনি জানতেন না, এ অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া।

অর্থ চুরির ঘটনায় ২০১৬ সালের নভেম্বরে দেগুইতোসহ সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দু'দফায় এএমএলসি দেশটির বিচার বিভাগে (ডিওজে) মামলা করে। মামলার পর দেগুইতোসহ চার সন্দেহভাজন আমানতকারীকে অভিযুক্ত করা হলেও ব্যাংকটির ওই সময়ের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তাকে দায়ী করা হয়নি। পরে দেগুইতো ছাড়া অন্য সহকর্মীদের ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অন্যদিকে আরসিবিসির তৎকালীন সিইও লরেঞ্জো তানকে আগেই অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার পর তিনি পদত্যাগ করেন।

মামলার ৯৭ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ব্যাংকের চার অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ স্থানান্তরের ক্ষেত্রে দেগুইতো যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেননি। তাকে এককভাবে অভিযুক্ত করার খবরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে তখন তিনি ডেইলি এনকোয়ারকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ওই সময় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন অন্য কর্মকর্তাদের সব দায় কনিষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে তার ওপর অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে অর্থ পাচারে নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে দেগুইতো সিনেটের থশুনানিতে বলেছিলেন, আরসিবিসির উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে তিনি কাজ করেছেন।

অর্থ স্থানান্তর নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে ফিলিপাইনের সিনেট কমিটি তদন্ত শুরু করে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা পাচার ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় এক কোটি ৯১ লাখ ডলার জরিমানা করে আরসিবিসিকে।

এ বিষয়ে আরো খবর